
মুজিবুর রহমান, ঢাকা : আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে এ বিধান অতীতে তেমন মানা হয়নি। সেজন্য এবার কঠোর হয়েছে সরকার। সম্পদের হিসাবের বিধান মানাতে দেওয়া হয়েছে চিঠি। হিসাব দেওয়ার পর তা করা হবে বিশ্লেষণ। অসঙ্গতি থাকলে দিতে হবে ব্যাখ্যা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর বিধি ১১, ১২ ও ১৩-তে সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রয় ও সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতে উল্লেখিত বিধিসমূহ কার্যকরভাবে কর্মকর্তাদের অনুসরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে জোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
এতে বলা হয়, এমতাবস্থায় ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর আওতাভুক্তদের তাদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/দফতর/অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত সব সরকারি কর্মকর্তার সম্পদবিবরণী দাখিল, এ সম্পদবিবরণীর ডাটাবেজ তৈরি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে স্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও বিক্রয়ের অনুমতি গ্রহণের বিষয়ে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর ১১, ১২ এবং ১৩ বিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত) এএফএম হায়াতুল্লাহ বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হ্রাস–বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়। অনেকেই এ চর্চা ঠিকমতো করেন না বলে চিঠির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর ‘সম্পত্তির ঘোষণা’ উপ-শিরোনামের ১৩ বিধিতে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার বা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলঙ্কারাদিসহ সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের নিকট ঘোষণা দিতে হবে এবং উক্ত ঘোষণায় নিম্নোক্ত বিষয়াদির উল্লেখ থাকবে-
২. পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি দামের প্রত্যেক প্রকারের অলঙ্কার পৃথকভাবে প্রদর্শন করতে হবে
৩. সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশের মাধ্যমে আরও যেসব তথ্য চাওয়া হয়
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে উপবিধি-(১) এর অধীনে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, প্রদত্ত ঘোষণায় অথবা বিগত পাঁচ বৎসরের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধি হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের নিকট দাখিল করতে হবে।’
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর গত ২৮ জুলাই নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কারো হিসাবে অসঙ্গতি থাকলে প্রথমে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এরপর উপযুক্ত জবাব না পেলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মিরর টাইমসকে বলেন, ‘কারো সম্পদের হিসাবে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তাকে প্রশ্ন করা হবে, ব্যাখ্যাও দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য সম্পদের এ হিসাব চাওয়া হয়েছে। হিসাবে অসঙ্গতি থাকলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেটি দেখবে।’
জানা গেছে, অফিস আদেশে হিসাব দেওয়ার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সেজন্য আদেশ জারির দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সম্পদের হিসাব দেওয়ার কোনো তাগিদ নেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা মিরর টাইমসকে বলেন, ‘সম্পদের হিসাব ইস্যুতে যে আদেশ জারি করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো তেমন সাড়া নেই। এ ক্ষেত্রে অনেকটা গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘না, না, এরকম কিছু না; তারা সম্পদের হিসাব দিয়ে দেবেন ইনশাহ আল্লাহ।’
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, ‘আমরা প্রথমে তাগিদ দিয়ে চিঠি দিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে সময় বেঁধে দেওয়া হবে।’ সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে দুর্নীতি কমবে এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।