
অর্থনীতি রিপোর্ট : দামের বিষয়ে জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবে বরাত বলেন, ‘ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোষণার পর থেকে বড় ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে। এই মৌসুমে ইলিশের দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই।’ তবে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্যের আশা, ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্তের কারণে দাম বাড়লেও ইলিশের সরবরাহ বাড়লে এই মাছ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
মৌসুমের শেষ দিকে চাঁদপুরের বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম। এতে হতাশ ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে চাহিদা বাড়ায় দামও কিছুটা বাড়তি।
এ বছর ইলিশের মৌসুম এলেও পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের জালে দেখা মিলছিল না রূপালি এই মাছের। মৌসুমের শেষ দিকে সেপ্টেম্বরে পূর্ণিমার সময় দক্ষিণাঞ্চলে ও সমুদ্র উপকূলে ধরা পড়ে প্রচুর ইলিশ ।
জেলেরা এসব ইলিশ নৌকা ও ট্রাকে করে নিয়ে আসেন চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাটে । বাজারে ইলিশের জোগান বাড়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। কম দামে ইলিশ কেনার আশা করেন ক্রেতারা।
এই মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীতে ৮ থেকে ১০টি ফিশিং বোট ভেড়ানো। ইলিশ বোঝাই ট্রাকও এসেছে বেশ কয়েকটা। সারা দিনে এই বাজারে প্রায় ৪ হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে।
ইলিশ ব্যবসায়ী সম্রাট বেপারী জানান, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, আলেকজান্ডার, সন্দ্বীপ, হাতিয়া থেকে প্রতিদিন ইলিশ আসছে। এসব জায়গা থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মণ ইলিশ আসে। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে আসে ৪ শ থেকে ৫ শ মণ।
আরেক ইলিশ ব্যবসায়ী বিপ্লব খান জানান, স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদীর ৫ শ থেকে ৭ শ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭ থেকে সাড়ে ৭ শ টাকায়, ৭ শ থেকে ৯ শ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ৯ শ থেকে সাড়ে ৯ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
১ কেজি থেকে ১২ শ গ্রামের ইলিশ সাড়ে ১২ শ থেকে ১৩ শ টাকায় এবং দেড় কেজি থেকে ১৮ শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪ শ থেকে ১৫ শ টাকা কেজি দরে । সমুদ্র ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীর ইলিশ প্রকার ভেদে ১ থেকে ২ শ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরবরাহ বাড়ার পরও দাম কমেনি বরং বেড়েছে। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে থেকে গেছে ইলিশ। এ ছাড়া গত বছরের চেয়ে ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।কুমিল্লা থেকে এই বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছেন আশিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর ইলিশের জন্য বিখ্যাত। তাই প্রতি বছরই ইলিশের মৌসুমে এখানে কিনতে আসি। আজকে দেখলাম কেজি প্রতি ইলিশের দাম আগের চেয়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা বেশি চাচ্ছে । অন্যান্য বছরের তুলনায় তো বেশিই।’
স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক নাজির আহমেদ বাদল বলেন, ‘অন্যান্য বছর ৬ শ থেকে ৭ শ গ্রামের ইলিশ সাড়ে ৪ শ থেকে ৫ শ টাকা কেজি দরে কিনেছি। এ বছর কিনলাম ৫শ’৭০ টাকায়।’
ক্রেতারা দাম বাড়ার অভিযোগ করলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন চাহিদার চেয়ে জোগান কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
চাঁদপুর কান্ট্রি বোট ফিশিং মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মল্লিক বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার অনেক কম ইলিশ ধরা পড়ছে। যে পরিমাণ ইলিশ উঠছে তাতে কোনোমতে নৌকার খরচ উঠছে। লাভের মুখ দেখতে পারছি না। মা ইলিশ ধরা বন্ধ করে দিলে জেলেদের মহাবিপদে পড়তে হবে।’
দামের বিষয়ে জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবে বরাত বলেন, ‘ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোষণার পর থেকে বড় ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে। এই মৌসুমে ইলিশের দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই।’তবে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্যের আশা, ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্তের কারণে দাম বাড়লেও ইলিশের সরবরাহ বাড়লে এই মাছ সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।