
বিতর্কিত কাশ্মিরসহ অমীমাংসিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে আনতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
সোমবার দুবাই-ভিত্তিক আরবি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল আল-আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আমার বার্তা হলো, আসুন আমরা টেবিলে বসে কাশ্মিরের মতো আমাদের জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানের জন্য গুরুতর ও আন্তরিক আলোচনা করি।’
তিনি বলেন, ভারতে সংখ্যালঘুরা নিপীড়িত হচ্ছেন। ভারতকে অবশ্যই এটি বন্ধ করতে হবে। অর্থপূর্ণ আলোচনার জন্য ভারত যে প্রস্তুত সেই বার্তা বিশ্বকে দিতেই এটি বন্ধ করতে হবে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত প্রায় ১৮ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে শেহবাজ শরিফ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চলুন আমরা টেবিলে বসে গুরুতর ও আন্তরিক আলোচনা করি। ভারত ও পাকিস্তান প্রতিবেশি দুই রাষ্ট্র এবং তাদের পরস্পরের সাথে বসবাস করতে হয় বলেও বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শেহবাজ।
শেহবাজ বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্য দূর করতে চাই, সমৃদ্ধি অর্জন করতে চাই এবং আমাদের জনগণকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। আমরা বোমা ও গোলাবারুদে আমাদের সম্পদ নষ্ট করতে চাই না, আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই বার্তা দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। তাদের সাথে শতাব্দী ধরে পাকিস্তানের অনন্য ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।’ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে অর্থাৎ পাকিস্তানের জন্মের আগে লাখ লাখ মুসলমানের সাথে সৌদি আরবের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এই মুসলমানরা মক্কা ও মদিনা সফর করতেন বলে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতও লাখ লাখ পাকিস্তানির দ্বিতীয় বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশটিতে সফল এক সফর করেছেন। তিনি বলেন, শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ একজন স্নেহপরায়ণ ভাই এবং পাকিস্তানের বড় সমর্থক ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের জনগণের উন্নতি এবং সমৃদ্ধি চেয়েছিলেন। শেখ জায়েদ আল নাহিয়ানও পাকিস্তানের মহান এক বন্ধু এবং পাকিস্তান তার হৃদয়ে আছে।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নেতারা বাণিজ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা, ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে উপস্থাপন এবং সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ পরিহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা কৌশলগত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করছি।’
শেহবাজ শরিফ বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ এবং সৌদি আরব; যারা নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত অংশীদার— তাদের প্রকৃত ও যথেষ্ট সমর্থন ছাড়া পাকিস্তানের দুর্দশা ও সঙ্কট লাঘব সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা এক প্রাণবন্ত ও সাহসী জাতি। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য আর বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে। সূত্র: ডন, রয়টার্স।