
মিরর স্পোর্টস : শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের বেশির ভাগই অনুপস্থিত থাকলেও বাংলাদেশ সফরে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং পুরো শক্তিরই ছিল। তুলনায় গেলে এখন সফরে থাকা নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আসন্ন সিরিজে স্বাগতিকদের লড়াইকে অসমই বলতে হয়। তা না বলে উপায় কী! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে গেলে কিউইদেরও মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশকে এবং তখন যে এই সফরের কাউকেই পাবেন না মাহমুদ উল্লাহরা। অর্থাৎ বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ভাবনায় এই সফর কাজে দেবে বলে একদমই মনে করেনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)।
তাই এই দলে এমন অনেক ক্রিকেটারের ওপর তাঁদের নির্ভরতা, যাঁদের বিশেষ করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা নিতান্তই সামান্য। ধরা যাক, মূল স্পিনার এজাজ প্যাটেলের কথাই। এই বাঁহাতি স্পিনার কুড়ি-বিশের ম্যাচই খেলেছেন মোটে দুটি, এর সর্বশেষটি আবার তিন বছর আগে। ঢাকায় এসেই করোনা পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে থাকা ফিন অ্যালেনের বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়া পেসার ম্যাট হেনরিও যেমন নিজের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন চার বছর আগে। বিশ্বকাপ দলের কেউই না থাকায় এমন আরো অনেকেই এই বাংলাদেশ সফরে পাচ্ছেন নিজেদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ।
সুযোগ লুফে নিতে মরিয়া এজাজের মতো কারো কারো জন্য এটি যেন হয়ে উঠেছে দারুণ এক ‘শিক্ষাসফর’ও। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে যেমন উইকেট সাজিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ, এই স্পিনারের নিজের দেশে তা অকল্পনীয়। এ রকম ধীরগতির টার্নিং উইকেটে বোলিং করার চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে থাকা এজাজ নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবীরারও শরণাপন্ন হচ্ছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক এই ব্যাটসম্যান একসময় বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরন ও এখানকার উইকেটে কার্যকরী হয়ে উঠতে বোলিংয়ের লাইন-লেন্থ কেমন হওয়া চাই, ইত্যাকার নানা বিষয়ে সামারাবীরার অভিজ্ঞতা তাই অমূল্যই হয়ে উঠেছে কিউইদের কাছে।
কিন্তু পাঁচ ম্যাচের এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্বাগতিকরা প্রত্যাশিতভাবে বিপুল ব্যবধানে জিতলেও তা বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ভাবনায় কতটা মূল্যবান? সে প্রশ্ন রেখেই ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে গড়াচ্ছে সিরিজ। টি-টোয়েন্টির বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান অবশ্য এর মধ্যেই বলে রেখেছেন যে এই সিরিজটি ভালো উইকেটে খেললেই বিশ্বকাপ প্রস্তুতির পক্ষে ‘উপযুক্ত’ হবে। তবে সেরকম কিছু যে হচ্ছে না, উইকেট অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মতোই হবে বলে জানিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স। তাতে প্রভাববিস্তারী আরো কিছু জয় মিলবে নিশ্চিত, তবে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক নিশ্চয়ই হবে না।
কারণ অক্টোবর-নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের উইকেট অবশ্যই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মতো হবে না। বৈশ্বিক আসরের উইকেট বিশেষত রানপ্রসবাই হয়। আর আসরের আগে আইপিএলের জন্য টানা ব্যবহারে ক্লান্ত আমিরাতের উইকেট কিছুটা ধীরগতির হলেও হতে পারে। তাই বলে মিরপুরের মতো সেখানকার উইকেট ব্যাটসম্যানদের ধাঁধায়ও ফেলবে না। বরং এখানে বোলিং করে যাওয়া বাংলাদেশের বোলারদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জেই ফেলবে। এরই মধ্যে আইপিএল খেলার জন্য অনাপত্তিপত্র চেয়ে রাখা সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমানরা না হয় আমিরাতে খেলে জমাট বিশ্বকাপ প্রস্তুতিই নেবেন। কিন্তু অন্যরা?
কিউইদের বিপক্ষে অসম লড়াই ছাপিয়ে তাই ভিনদেশের উইকেটে বোলিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েও আগাম ভাবনায় ডুবে যেতে হচ্ছে অন্যদের। এঁদের অন্যতম শেখ মেহেদী হাসান টি-টোয়েন্টিতে এখন নতুন বলেও বোলিং করেন। বিশ্বকাপের উইকেটে কেমন বোলিং করতে হবে, সেই ছকও এখনই তাঁর মনোজগতে ঢুকে পড়ার জানান দিলেন, ‘অন্য দেশে খেলতে গেলে ভিন্ন পরিকল্পনার প্রয়োজন। বাংলাদেশে যেরকম, অন্য দেশে এক রকম নয়। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা আছে। আমাদের স্পিন ও হেড কোচও সহায়তা করেন। ক্রিকেট খেলতে গেলে সব কন্ডিশনের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হবে। এখানে অজুহাতের কোনো জায়গা নেই। চ্যালেঞ্জ নিতে গেলে সব জায়গায় ভালো করার বিকল্প নেই।’
কিউইদের বিপক্ষে উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের বিকল্প ভাবনা অবশ্য মেহেদীদের জন্য বিশ্বকাপ প্রস্তুতির দুয়ারও খুলে রাখতে পারত!