
দেশের বিমা খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই- বিশেষ করে জীবন বিমার দাবি যথাসময়ে পরিশোধ করা নিয়ে। প্রায় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বছরের পর বছর ঘুরেও পলিসির টাকা নিয়মিত পরিশোধ করা সত্ত্বেও মেয়াদ শেষে সেই টাকা পাওয়া যায় না। মৃত্যু দাবির অর্থ পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। দুই একটি বিরল ব্যতিক্রম বাদে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উঠে থাকে এ ধরনের অভিযোগ। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় বিমা খাতে সাধারণ মানুষের আস্থার অভাব প্রকট। যে কারণে গ্রাহকের সংখ্যাও কমছে দিন দিন।
জাতীয় বিমা দিবস-২০২২ উদ্যাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিমা খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড এবং অটোমেশনে আনার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে শুরু করেন কর্মজীবন। সেই স্মৃতি ধরে রাখতে প্রতি বছরের ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস ঘোষণা করে সরকার। বিমা খাতকে গুরুত্ব দিতে বিমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে ২০১১ সালে গঠন করা হয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (আইডিআরএ)।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতে বিমা খাত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে দেশে বিমা খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে ব্যাংকের চেয়েও বেশি বিমা কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এখন ব্যাংক আছে ৬১টি। আর বিমা কোম্পানি ৮১টি। তবে বিমা খাতের বিপুল বিকাশ ঘটলেও মানুষ কাক্সিক্ষত হারে বিমা সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে বিমার গ্রাহক মাত্র ২ কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে জীবন বিমার গ্রাহক প্রায় ২ কোটি এবং সাধারণ বিমার গ্রাহক ৩০ লাখ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি যেভাবে এগিয়ে চলেছে, সেই তুলনায় বিমা খাতের তেমন অবদান নেই বললেই চলে। প্রধানত সর্বস্তরের মানুষের আস্থার সংকটের কারণেই বিমা খাতের এহেন করুণ অবস্থা।
দেশের বিমা শিল্পের এমন রুগ্ন ও অবিকশিত থাকার কথা নয়। একটি শিশু জন্মের পর থেকেই আসতে পারে বিমার আওতায়। বাংলাদেশেও তা সম্ভব। তবে বিবিধ বিমা পণ্য ও সেবা বিক্রিতে বিমা খাত এখনো মান্ধাতার আমলেই পড়ে আছে। আর এখানেই নিহিত রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমা খাতে অটোমেশন তথা ডিজিটালাইজড করার বিষয়টি। করপোরেট সুশাসনের অভাব, অদক্ষ ও অপর্যাপ্ত মানব সম্পদ, বিমা পণ্য প্রণয়ন ও বিপণন, সম্পদ ও দায়ের ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে।