
একটা সময় ছিল যখন শিক্ষার্থীরা পড়া না পারলে শিক্ষক রাগ করে তাদের গরু-ছাগল বলতেন। মহামতি এসব শিক্ষকদের কেউ কেউ এভাবে আক্ষেপ করতেন, ‘তোরা গরু ছাগল-ই থাকবি, মানুষ হবি না’। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টমিষ্টি বালককে গরু ডাক শুনতে শুনতে ইস্কুলের পাঠ চুকিয়ে নবতর জীবনে প্রবেশ করতে হতো। এখন আর শিক্ষার্থীকে কেউ আদরের ছলে, শাসনের ছলে গরু বলে সম্বোধন করে না। আমাদের শিক্ষকগণ ভুলেই গেছেন, তাদের একটা মহান পেশা ছিলো, ছাত্ররা ভুলে গেছে, এই বৃহৎ পৃথিবীতে তাদের আরো কিছু জানার বাকি ছিলো, ব্ল্যাকবোর্ডে ঐ বিশাল মানচিত্রে আরো কিছু মহাদেশ ছিলো, আরো কিছু মহাসাগর ছিলো। আমাদের বিদ্যালয়গুলো আর তেমন নেই। শিক্ষকের শাসন-বারণ নেই, বকাঝকা নেই, পরীক্ষা নেই, একজাম হল নেই, মহান বেত-পুরুষ নেই, মহীয়ান কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। বিদ্যালয় হয়ে গেছে গোয়াল ঘর। কোনো রূপকার্থে নয়, বাস্তবিকই দেখা যাচ্ছে, স্কুলের মাঠে কোথাও ধান চাষ হচ্ছে, কোনো স্কুলের বারান্দায় বেঁধে রাখা হয়েছে গরু, আবার কোনো স্কুলের সামনের করিডোরে বসে কুড়ি-কাড়ি ছেলের দল পাবজি-ফ্রিফায়ার খেলছে। কোভিড আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসেনি। করোনাকালীন সময়ে সবচেয়ে দীর্ঘায়িত সমস্যার কবলে পড়েছে শিক্ষাখাত। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ছিলো আর এখন শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙে কশেরুকা আলাদা হয়ে গেছে। ১৯ আগস্ট থেকে সব খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে শিক্ষা নামক জিনিসটা অস্বাভাবিক একটা গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে আছে, ছাত্র-শিক্ষক কেউ এটা চায় না। স্কুলগুলো খুলে দেয়া হোক। গরু-ছাগলের গোবর-চনার অবসান হোক। শিক্ষার ফুল ফুটুক, আর যারা এই আলয়ের পাখি, তারা ফিরে যাক তাদের নীড়ে, ক্লাসরুমে, আড্ডায়, গানে।