
করোনার চরম দুর্বিপাকে উন্নয়নের বিভিন্ন খাতের ওপর যে অযাচিত বিপন্নতা তা পুষিয়ে নিতেও প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থাপনা জরুরী। জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা কার্যক্রমে যে স্থবিরতার আবরণ পড়ে তা কাটাতে দীর্ঘ ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হয়। শেষ অবধি ১২ সেপ্টেম্বর কলকাকলিতে মুখরিত শিক্ষাঙ্গন তার প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগে ফিরে গেলে নতুন আলোর নিশানায় শিক্ষার্থীরা আনন্দ আবেগে আপ্লুত হয়। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী জীবনে কোন স্বস্তি কিংবা শান্তি ছিল না। প্রাসঙ্গিক বই, খাতা, কলমও ছিল অনাদরে, অবহেলায়। অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমে শ্রেণী পাঠদানও সর্বত্রসুলভ হয়নি। অগণিত ছাত্রছাত্রীর শিক্ষালয় থেকে বিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা কোনভাবেই কাম্য ছিল না। শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাঠ্যপুস্তকের যে দৈন্যদশা তাও সময়ের অনভিপ্রেত সঙ্কট। এর সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ সংক্রান্ত প্রকাশনা সংস্থা ও বিপণন কার্যক্রম। করোনাকালে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের মধ্যে পুস্তক প্রকাশনা এবং বিক্রেতা সংস্থা লাভ-ক্ষতির হিসাবে যে দুঃসহ সময় পার করছে সেখানে ক্ষতির পাল্লাই ভারি।
সম্প্রতি স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়াতে পুস্তক বিক্রেতারা যে ক্রান্তিকাল পার করেছেন সেখান থেকে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসার চিত্রও স্বস্তিদায়ক। তবে আগের মতো এই বিক্রির উৎসব এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। তারপরেও পাঠ্যপুস্তক বিক্রি শুরু হওয়া এক আবশ্যিক পর্যায়। এখন বছরের শেষ সময়। সেভাবে বই বিক্রি পর্যাপ্ত নয়। নতুন বছরের শুরুতে তা অনেকটাই গতি ফিরে পাবে। সরকারও নতুন পাঠ্যবই বাজারে নিয়ে আসবে। আবারও শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়ে বই পাওয়ার আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবে। প্রকাশক এবং বিক্রেতা সংস্থা আশার আলো দেখছে পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে।
ব্যবসায়ীরা খুব বেশি না হলেও লাভের মুখ দেখছেন কিছুটা। যতখানি খরচ হয়েছে সেটুকু উঠে আসছে কোনমতে। আপাতত লাভের অঙ্কটা তোলাই থাকল। একইভাবে খাতা, কলম, পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স ইত্যাদির ওপরও পড়েছে অপ্রত্যাশিত স্থবিরতা। সেখানেও নতুন আমেজ তৈরি হয়ে বিপণনে গতি এসেছে। কারণ, বছরের শেষ সময়ে বই কেনার হিড়িক না পড়লেও খাতা, কাগজ, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি প্রয়োজনমতো কিনতেই হচ্ছে। আবার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুদে ও উদীয়মান প্রজন্মের ইউনিফর্ম ছোট হয়ে যাওয়াও জরুরী বিবেচনায় সামনে চলে এসেছে। শিক্ষার্থীদের শরীর ও মনের বিকাশ হওয়ার সুবর্ণ সময়টিতে তারা ঘরে বসে দিন কাটিয়েছে। সঙ্গত কারণে স্কুলের ড্রেস ছোট হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। সেখানেও নতুন কাপড় কিনে ড্রেস বানানোর চিত্রও উঠে আসছে। সব মিলিয়ে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন সম্ভাবনায় তাদের এগিয়ে নিতে বিভিন্ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছে, যা অর্থনীতির এই খাতকে চালিত করছে নতুন মাত্রায়।
তবে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সংস্থা এখনও সরকার প্রদত্ত কোন আর্থিক প্রণোদনা পায়নি। অবিলম্বে তাদের প্রণোদনা স্কিমের আওতায় এনে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে তা বিতরণ সময়ের দাবি। তা না হলে পুস্তক শিল্প প্রকাশনা সংস্থা যে আরও বিপর্যয়ের আবর্তে পড়বে তাতে সন্দেহ নেই। তাই এই শিল্পকে সমর্যাদায় সুরক্ষিত রাখতে গেলে সরকার ঘোষিত প্রাসঙ্গিক আর্থিক অনুদান সংশ্লিষ্টদের মাঝে পৌঁছে দেয়াও এক প্রকার দায়বদ্ধতা। আশা করা যাচ্ছে, সরকার অচিরেই প্রণোদনা সংক্রান্ত একটি কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে পুস্তক শিল্প প্রকাশন ও বিক্রেতাদের জন্য মানসম্মত একটি বাজেট বরাদ্দ করে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করতে এগিয়ে আসবে।