
ঢাকা : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখনো ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশি আক্রমণ চলছে, হয়রানি হচ্ছে, তল্লাশি চলছে। কেন, কারণ কী? কারণ, বিএনপি জেগে উঠছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে বিএনপিকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে, কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে।’
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে করোনা ও ডেঙ্গু হেল্প সেন্টার কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারের ‘হৃদকম্পন’ শুরু হয়েছে। তারা ভয় পেয়েছে, কাঁপছে। এজন্য তারা বিএনপির ওপর চড়াও হয়ে আক্রমণ করছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচার, কোনো একনায়ক, কোনো ফ্যাসিবাদী শাসক বা কোনো অত্যাচারী শাসক কোনো দিনই টিকে থাকতে পারেনি। জনতার উত্তাল রোষের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তখন আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।’
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো সময় আছে, আপনারা দেয়ালের লিখনগুলো পড়ুন, মানুষের চোখের ভাষা দেখুন, মানুষের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন। এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করুন আপনাদের ব্যর্থতার জন্য। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণের ভোটের অধিকার বন্ধ করে দিয়ে, আগের রাতে ভোট চুরি করে আপনারা যে অপরাধ করেছেন, সেখানে থেকে যদি রক্ষা পেতে চান তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণ যাতে তাদের পছন্দ মতো সরকার নির্বাচন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে উঠে দাঁড়াবার। এখন সময় এসেছে এই সরকারকে পরিষ্কার করে বলে দেওয়ার যে, তোমাকে আমরা চাই না, এখন বিদায় নিতে হবে এবং নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে। জনগণের নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় জনগণই সরাতে বাধ্য করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নেতার কথা বলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। নেতা তো একজন আমাদের বাংলাদেশে- বেগম খালেদা জিয়া। তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি স্বৈরাচারকে পরাজিত করে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে, লড়াই করতে গিয়ে গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনার টেস্ট, করোনার টিকা সংগ্রহ, বিতরণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে কী কাণ্ড তারা ঘটিয়েছে, আপনারা নিজেরাই সব দেখেছেন। আজ তারা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু করোনা নয়, তারা আজ গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছেন। এখন যদি কেউ হঠাৎ অসুস্থ হন, জরুরিভাবে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়ে, অন্য কোনো রোগেও হাসপাতালে আপনি কোনো চিকিৎসা পাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে একটা চরম অরাজকতা, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কারণ, যারা দেশ চালাচ্ছেন এখন, তারা দেশ চালানোর জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হননি। ফলে কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গুতে মানুষজনের আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এজন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সুচতুরভাবে প্রথমে সংবিধানকে তারা তাদের মতো করে নিয়েছে। পরে সব বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দলীয়করণ করেছে। আজকে গণমাধ্যমকেও তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। গতকালের (মঙ্গলবার) পত্রপত্রিকাগুলো যদি দেখেন তাহলে দেখবেন, কীভাবে সব গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির করোনা হেল্প সেন্টার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে ও মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ নবী বক্তব্য দেন।