
মিরর ডেস্ক : ২০ বছর আগে আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে হামলা চালানো হয়। ওই হামলা ছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ একটি হামলা। শুধু আমেরিকানদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বই চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়।
দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। সেদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনেও হামলা চালানো হয়। এছাড়া ছিনতাই হওয়া আরও একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল পেনসিলভানিয়ার শাঙ্কসভিলে। প্রথম বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে নর্থ টাওয়ারে আঘাত হানে। দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত হয় এর অল্প কিছুক্ষণ পরই।
দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির উপরতলায় মানুষজন আটকা পড়ে যায়। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দুটি টাওয়ারই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে।
তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বিশাল এই সদর দপ্তর।
এরপর সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার এক মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়। ধারণা করা হয়, ছিনতাইকারীরা চতুর্থ বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল ভবনের ওপর আঘাত হানতে চেয়েছিল।
এসব হামলায় সব মিলিয়ে মারা গিয়েছিল ২ হাজার ৯৭৭ জন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নিউইয়র্কের মানুষ। চারটি বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুর প্রত্যেকেই মারা যান। টুইন টাওয়ারের দুটি ভবনে মারা যান ২ হাজার ৬০৬ জন।
পেন্টাগনের হামলায় প্রাণ হারান ১২৫ জন। ভয়াবহ হামলায় সর্বকনিষ্ঠ নিহতের বয়স ছিল মাত্র দু’বছর। তার নাম ক্রিস্টিন লি হ্যানসন। বাবা মায়ের সঙ্গে একটি বিমানের যাত্রী ছিল সে।
নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির নাম রবার্ট নর্টন। তার বয়স ছিল ৮২ বছর। তিনি ছিলেন অন্য আরেকটি বিমানে এবং তার স্ত্রী জ্যাকুলিনের সঙ্গে তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।
প্রথম বিমানটি যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন ভেতরে আনুমানিক ১৭ হাজার ৪শ জন ছিলেন। নর্থ টাওয়ারের যে অংশে বিমান আঘাত করে, তার উপরের কোন তলার মানুষই প্রাণে বাঁচেনি। তবে সাউথ টাওয়ারে যেখানে বিমান আঘাত করে, তার উপরের অংশ থেকে ১৮ জন প্রাণ নিয়ে বেরুতে পেরেছিল।
হতাহতের মধ্যে ৭৭টি দেশের মানুষ ছিলেন। নিউইয়র্ক শহরে যারা প্রথম ঘটনাস্থলে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় ছুটে যান, তাদের মধ্যে মারা যান ৪৪১ জন। হাজার হাজার মানুষ আহত হন, যারা পরে নানাধরনের অসুস্থতার শিকার হন। যেমন দমকলকর্মীদের অনেকে বিষাক্ত বর্জ্যের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
১১ সেপ্টেম্বরের ওই হামলার ঘটনার পর থেকে সারাবিশ্বে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দর ও বিমানের ভেতর নিরাপত্তা আরও কঠোর করতে ট্রান্সপোর্টেশান সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামে পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন গঠন করা হয়।
নিউইয়র্কে হামলার স্থান, যেখানে টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছিল সেই ‘গ্রাউন্ড জিরো’র ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে সময় লেগেছিল আট মাসেরও বেশি সময়। ওই স্থানে এখন তৈরি হয়েছে একটি যাদুঘর এবং একটি স্মৃতিসৌধ। ভবনগুলো আবারও নির্মিত হয়েছে, তবে ভিন্ন নক্সায়।
সেখানে মধ্যমণি হিসেবে নির্মিত হয়েছে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা ‘ফ্রিডম টাওয়ার’- যা উচ্চতায় আগের নর্থ টাওয়ারের চেয়েও বেশি। আগের নর্থ টাওয়ারের উচ্চতা ছিল ১ হাজার ৩৬৮ ফুট আর নতুন ফ্রিডম টাওয়ার ১ হাজার ৭৭৬ ফুট উঁচু।
পেন্টাগন পুনর্নিমাণে সময় লেগেছিল এক বছরের কিছু কম সময়। ২০০২ সালের আগস্টের মধ্যে পেন্টাগনের কর্মচারীরা আবারও তাদের কর্মস্থলে ফিরে যান।