
হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা পল্লীতে ছাগল চুরির অপরাধে গাছে বেঁধে আরিফ খান (১৫) ও সৌরভ হোসেন (১৫) নামের স্কুলছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যসহ অনেককেই ওই দুই কিশোরকে মারধর করতে দেখা গেছে। এতে অভিযুক্ত বোয়ালদাড় ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য নাজমুল হোসাইনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে হাকিমপুরের মোল্লাবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। কিশোর আরিফ খান হাকিমপুরের চুড়িপট্টি গ্রামের মনির খানের ছেলে ও সৌরভ হোসেন হাকিমপুর রেলস্টেশন এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। তারা দুই জনই বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
এ দুই কিশোর মিরর টাইমসকে বলে, ‘শুক্রবার সকালে আমরা দুই বন্ধু মিলে মোটরসাইকেল নিয়ে হাকিমপুরের মোল্লাবাজার এলাকায় ঘুরতে যাই। এ সময় মোটরসাইকেল রেখে সড়কের পাশে বসি। পাশে থাকা একটি ছাগলকে পাতা খাওয়াচ্ছিলাম। পরে দরকারে দুই জনে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় তাদের একজন আমাদেরকে ছাগলের কাছে দেখছে, এর আগেও নাকি ছাগল হারিয়েছে সেটা মনে করে আমাদেরকে ধাওয়া করে ধরে। পরে আমাদেরকে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মেম্বারসহ যে যেভাবে পেরেছে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর করেছে। অনুরোধ করলেও কেউ আমাদের কথা শোনেনি।’
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নাজমুল হোসাইন মিরর টাইমসকে বলেন, ‘দুইটি ছেলে আমাদের গ্রামের একটি ব্রিজে বসেছিল মাস্ক পরে। তারা সেখানে থাকা একটি ছাগলকে ধরে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে বোয়ালদাড় অভিমুখে চলে যায়। এ সময় রাসেল নামের স্থানীয় এক যুবক দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে না পেয়ে ফিরে আসে। এর কিছুক্ষণ পর ওই দুই ছেলে মোটরসাইকেলে করে আবারও একটি খাসি নিয়ে হিলির দিকে যাচ্ছিল জানতে পেরে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের ধাওয়া করি। ধাওয়া খেয়ে কিছু দূর গিয়ে খাসিটি মোটরসাইকেল থেকে ফেলে তারা দুই জন পালিয়ে যায়। এ সময় আমি খাসিটি উদ্ধার করে মোল্লাবাজারে চলে আসি। এর কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, ওই দুই ছেলে ছোটডাঙ্গাপাড়া নামক স্থানে ভ্যানের সঙ্গে এক্সিডেন্ট করেছে। স্থানীয়রা খবর পেয়ে তাদের সেখান থেকে ধরে মোল্লাবাজারে নিয়ে আসে। পরে তারা তাকে একটু মারধর করেছে, আমিও মেরেছি। তবে সেটি আমার ভুল হয়ে যেতে পারে। তাদের অভিভাবকদের খবর দেওয়া হলে তারা এসে বিষয়টি মীমাংসা করেন।’
হাকিমপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজীব জানান, ‘দুই কিশোরকে চোর সন্দেহে পেটানো হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় যারা মারধর করছিল তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে দুই কিশোরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অভিভাবকের জিম্মায় দিয়েছি। বিষয়টি আমরা দেখছি। অভিভাবকরা ছয় জনের নাম ও ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই অভিযান চালিয়ে নাজমুল নামের এক ইউপি সদস্যকে আটক করেছি। বাকিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’